লেখক: পথচিহ্ন | রিপোর্টার, JCV News 24
প্রকাশিত: ২৩ মে ২০২৫ | ঢাকা
ভূমিকা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অগ্রগামী এবং অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতার ঘোষক, দক্ষ সেনা কর্মকর্তা, সংস্কারক রাষ্ট্রনায়ক এবং বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি দেশবাসীর নিকট সর্বদা স্মরণীয়।
প্রতি বছরের মতো এবারও ৩০ মে শহীদ জিয়ার শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি দেশব্যাপী তিন দিনের কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। এই কর্মসূচি কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং জাতির সামনে শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক আদর্শ ও অবদানের গুরুত্ব নতুন করে তুলে ধরার একটি উদ্দীপনামূলক উদ্যোগ।
শহীদ জিয়াউর রহমান: একটি ইতিহাস
জিয়াউর রহমান জন্মগ্রহণ করেন ১৯ জানুয়ারি ১৯৩৬ সালে, বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির উদ্দেশ্যে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন। তার কণ্ঠে প্রচারিত এই ঘোষণা ছিল মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট।
স্বাধীনতার পর তিনি ধাপে ধাপে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন এবং পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। ১৯৭৮ সালে তিনি বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে যাত্রা শুরু করেন। তার রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সময়ে তিনি কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য এবং শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
১৯৮১ সালের ৩০ মে রাতে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে কিছু বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে শহীদ হন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তার মৃত্যু দেশের রাজনীতিতে এক গভীর শোকের ছায়া ফেলে এবং আজও সেই শোক জাতি স্মরণ করে থাকে।
৪৪তম শাহাদাৎবার্ষিকীর তিন দিনের কর্মসূচি
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশে তিন দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দলীয় কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা, মহানগর, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়েও এই কর্মসূচি পালিত হবে।
প্রথম দিন: ২৯ মে (বুধবার)
প্রথম দিন পালিত হবে শহীদ জিয়ার আত্মার মাগফিরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে আসরের নামাজের পর কেন্দ্রীয়ভাবে এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটি, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ হাজারো দলীয় নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করবেন।
একইসঙ্গে দেশের প্রতিটি জেলায় জিয়াউর রহমানের স্মরণে স্থানীয়ভাবে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে।
দ্বিতীয় দিন: ৩০ মে (বৃহস্পতিবার – শাহাদাৎ দিবস)
এদিন সকাল থেকে শুরু হবে শহীদ জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।
সকাল ৮টায় বিএনপির শীর্ষ নেতারা চন্দ্রিমা উদ্যানে শহীদ জিয়ার মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন এবং কোরআন তেলাওয়াত, ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।
বেলা ১২টায় নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, সাংবাদিক ও নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
আলোচনায় অংশ নেবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্যগণ, সিনিয়র আইনজীবী ও বিশ্লেষকগণ।
সভায় শহীদ জিয়ার রাষ্ট্রনীতি, সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নেতৃত্বগুণ বিশ্লেষণ করা হবে।
তৃতীয় দিন: ৩১ মে (শুক্রবার)
তৃতীয় দিনটিকে বিএনপি ঘোষণা করেছে ‘সেবাদিবস’ হিসেবে।
সারা দেশে বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলোর ব্যবস্থাপনায় গরীব ও দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ, বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা এবং শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণের মতো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রক্তদান কর্মসূচি ও ওষুধ বিতরণ ক্যাম্পেরও আয়োজন করা হবে।
এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি শহীদ জিয়ার “জনকল্যাণমূলক রাজনীতি”-কে স্মরণ করাতে চায়।
রাজনৈতিক বার্তা ও প্রাসঙ্গিকতা
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “শহীদ জিয়াউর রহমান ছিলেন জনগণের নেতা। তার চিন্তা-চেতনা, কর্মপদ্ধতি এবং জনগণের প্রতি ভালোবাসা আমাদের রাজনীতির মূল অনুপ্রেরণা। তিনি একদিকে যেমন ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, অন্যদিকে রাষ্ট্র গঠনের রূপকার। তার শাহাদাৎ আমাদের জাতীয় জীবনে এক অপূরণীয় ক্ষতি।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শহীদ জিয়ার শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচি কেবল স্মরণসভা নয়, বরং এটি দলের রাজনৈতিক পুনরুজ্জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগও বটে। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় এটি দলীয় ঐক্য এবং মাঠ পর্যায়ে কর্মী পুনর্মোতায়েনের একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন অনেকেই।
উপসংহার
বাংলাদেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের ইতিহাসে শহীদ জিয়াউর রহমান একটি অবিচ্ছেদ্য নাম। তার আত্মত্যাগ ও নেতৃত্বের গুণাবলি আজও জাতির পথনির্দেশক। ৪৪তম শাহাদাৎবার্ষিকীতে তার স্মৃতিকে যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করে বিএনপির এই উদ্যোগ কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং একটি প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের মধ্যে ইতিহাস ও আদর্শ হস্তান্তরের প্রয়াস।







