লেখক: পথচিহ্ন, রিপোর্টার, JCV News 24
তারিখ: ২৮ মে ২০২৫
ভূমিকা
বাংলাদেশের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংকট ও বিভাজনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে একটি জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা সময়োপযোগী ও অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের শুরুতে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এই প্রেক্ষাপটে দেশের রাজনৈতিক সংস্কার এবং স্থিতিশীলতা অর্জনের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কমিশনটি সংবিধান সংস্কার, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের সুপারিশ প্রদান করে সরকারের সামনে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ উপস্থাপন করেছে (প্রথম আলো)।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের গঠন ও প্রভাব
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার একটি মাইলফলক স্থাপন করেছে। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কমিশনের সভাপতি, আর অধ্যাপক আলী রীয়াজ সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কমিশনে বিভিন্ন সংস্কার ক্ষেত্রের প্রতিনিধিরা আছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন জনপ্রশাসন, পুলিশ, নির্বাচন, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধানরা। এই বহুমুখী গঠন কমিশনের কার্যকারিতা ও প্রভাব বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হচ্ছে (ঢাকা টাইমস)।
এই কমিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কারে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ এটি শুধু একক সংস্থা নয়, বরং একটি সামগ্রিক জাতীয় কাঠামো তৈরির জন্য কাজ করছে যা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দূর করবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মজবুত করবে।
কমিশনের সুপারিশ ও কার্যক্রমের বিশ্লেষণ
কমিশন বিভিন্ন খাতে সুপারিশ প্রণয়ন করেছে। সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রের মূলনীতি পুনর্বিবেচনা করে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ এবং রাষ্ট্রের প্রধানদের মেয়াদ সীমিত করার সুপারিশ করেছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যা রাজনৈতিক ক্ষমতার দীর্ঘমেয়াদী অপব্যবহার রোধে সহায়ক হবে (এনটিভি)।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে। এটি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি ও অযোগ্য প্রভাব নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পুলিশি ক্ষমতার সীমা নির্ধারণ এবং মানবাধিকার রক্ষায় গুরুত্ব আরোপ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশি নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধ করা একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক চাহিদা ছিল, যা কমিশনের সুপারিশে বাস্তবায়নের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন স্বচ্ছতা ও প্রশাসন সংহত করার মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে শক্তিশালী করার জন্য সুপারিশ দিয়েছে। এ থেকে আশা করা যায় সরকারি শাসনে জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে (প্রথম আলো)।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন একটি কঠিন প্রক্রিয়া। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর মধ্যে সম্মতি প্রয়োজন। সরকারের ফেব্রুয়ারিতে শুরু করা সংলাপ এই ঐকমত্য গড়ার একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাতীয় সনদ নামে একটি দলীয় ঐকমত্য চুক্তি গঠন হলে তা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। তবে এর সফলতা নির্ভর করবে রাজনীতিবিদদের আন্তরিকতা এবং সাধারণ জনগণের সমর্থনের উপর।
রাজনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মজবুত করার জন্যও কমিশনের কার্যক্রম একটি উল্লেখযোগ্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে। যদি সুপারিশসমূহ বাস্তবায়িত হয়, তাহলে বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাবে।
উপসংহার
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের গঠন এবং তাদের সুপারিশ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কারে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। যদিও চ্যালেঞ্জগুলো অনেক, তবে ঐকমত্য ও সংস্কারের এই প্রক্রিয়া দেশের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য অত্যাবশ্যক। আগামী দিনে এই কমিশনের কার্যক্রমের ফলাফল দেশের ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করবে।
রিপোর্টার: পথচিহ্ন, JCV News 24







