স্থানীয় জনগণের সরব উপস্থিতি, ক্ষোভ আর প্রত্যাশার বার্তা
খুলনায় অনুষ্ঠিত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানি ছিল এক জ্বলন্ত প্রমাণ, কীভাবে সরকারি সেবা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতি মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করছে। স্থানীয় জনগণ তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে ভিড় জমায়, এবং প্রতিটি অভিজ্ঞতা যেন একেকটি অভিযোগপত্র হয়ে ওঠে। তারা অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ফাইল আটকে রাখা, ঘুষ ছাড়া কাজ না হওয়া, সেবা প্রদানে দেরি এবং প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে।
দুদকের কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ের বাস্তব চিত্র শুনে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়গুলো নেন এবং আশ্বাস দেন যে এই অভিযোগগুলোর যথাযথ তদন্ত হবে। অনেকে বলছেন, গণশুনানির এই উদ্যোগ জনগণকে কথা বলার এবং তাদের ক্ষোভ প্রকাশের বিরল সুযোগ দিয়েছে, যা খুব কমই দেখা যায়।
অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল ভূমি অফিসের অনিয়ম, বিভিন্ন সরকারি সহায়তা কর্মসূচিতে দুর্নীতি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে সেবার মান নিম্নগামী হওয়া ইত্যাদি। সাধারণ মানুষ সরাসরি বলেছে, তারা শুধু শোনার আশায় নয়, বরং কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চায়।
দুদক কর্মকর্তারা উপস্থিত জনগণকে বলেন, অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে তদন্ত শুরু হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কিছু মানুষ সংশয় প্রকাশ করেছেন যে, আগে বহুবার এমন শুনানি হলেও বাস্তবায়ন ও শাস্তির দিক থেকে ফলাফল খুব সীমিত থেকে গেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গণশুনানি যদি শুধু প্রতীকী না হয়ে কার্যকর পদক্ষেপে রূপ নেয়, তবে এটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা দিতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং সমাজের সম্মিলিত সচেতনতা।
বাংলাদেশে দুর্নীতি এমন এক চক্র, যা শুধু আইন ও নির্দেশনার মাধ্যমে ভাঙা সম্ভব নয়; এর জন্য লাগবে নাগরিক সমাজের সক্রিয়তা এবং একনিষ্ঠ প্রয়াস। খুলনার গণশুনানি সেই প্রতিশ্রুতির প্রথম ধাপ হতে পারে—যদি তা সঠিকভাবে কার্যকর হয় এবং শুধু শোনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে।
সূত্র: BBC, প্রথম আলো, প্রথম আলো
প্রতিবেদন: পথচিহ্ন | JCV News 24





